ঢাকা , শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫ , ২২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
সাঁথিয়ায় সোতি জালে বাধাগ্রস্ত পেঁয়াজের আবাদ ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর আজ নির্বাচনে আগে সহিংসতার শঙ্কা নিয়ে আইআরআই’র সঙ্গে একমত সরকার সংস্কার বাস্তবায়নে ব্যর্থ রাজনৈতিক দলগুলো ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বাসাবাড়িতে এডিস মশার লার্ভা তদারকিতে মাঠে নামছে ডিএসসিসি মিথ্যা মামলার বাদীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের মাত্রাতিরিক্ত নির্ভরশীলতায় হুমকিতে জনস্বাস্থ্য ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি বাঁধনসহ সাত জন ১০ দিনের রিমান্ডে গাজীপুরে ৩৭ রোগাক্রান্ত ঘোড়াসহ বিপুল পরিমাণ ঘোড়ার মাংস জব্দ ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৬-এ লড়বেন জোনায়েদ সাকি ভাড়া বেশি নিলে তিনগুণ ক্ষতিপূরণ টিকিট কারসাজিতে ৫ বছরের জেল এনা পরিবহনের বাস জব্দের দাবি নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ৭ নভেম্বরের বিপ্লবই দেশের অর্থনীতি ও গণতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করেছিল-নজরুল গবেষণায় আগ্রহী হচ্ছে না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মেগা প্রকল্পের পরিবর্তে মানুষকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান পরিবেশ উপদেষ্টার দেশীয় গরুর জাত সংরক্ষণের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়াতে হবে : প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা জ্বালানির অভাবে ১৩৫ বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে ১৫টির উৎপাদন বন্ধ কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পাশাপাশি উন্নত অবকাঠামো চায় বন্দর রাষ্ট্রপতির কাছে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র পেশ মাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের কারণ পাইলটের উড্ডয়ন ত্রুটি
* মালয়েশিয়া চুক্তি নিয়েও চলছে বিতর্ক, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বিদেশে শ্রমিক প্রেরণ কমেছে ২৩ শতাংশ

হুমকির মুখে জনশক্তি রফতানি সংকুচিত হচ্ছে শ্রমবাজার

  • আপলোড সময় : ০৫-১১-২০২৫ ০৬:৪৭:০১ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৫-১১-২০২৫ ০৬:৪৭:০১ অপরাহ্ন
হুমকির মুখে জনশক্তি রফতানি সংকুচিত হচ্ছে শ্রমবাজার
নতুন  শ্রমবাজার  প্রবেশে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ছে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইউরোপের দেশগুলোতে ভাষাগত ও কারিগরি দক্ষতার অভাবে বাংলাদেশি কর্মীরা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না। ফলে কোটা কমছে এবং ফিলিপাইন, নেপাল ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো এগিয়ে যাচ্ছে।
অপরদিকে পুরোনো শ্রমবাজারগুলোতেও সংকোচন দেখা যাচ্ছে। ২০২৪ সালে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ। সৌদি আরব, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতেও একই প্রবণতা স্পষ্ট। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যে দেখা যায়, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বিদেশে শ্রমিক প্রেরণ কমেছে ২৩ শতাংশ। শ্রমবাজার সংশ্লিষ্টরা এমন তথ্য জানিয়েছেন।
জানাগেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাত দীর্ঘদিন ধরেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে এসেছে। রেমিট্যান্স দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা আয়, যা গ্রামীণ অর্থনীতি থেকে শুরু করে জাতীয় বাজেট পর্যন্ত প্রভাব ফেলে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এ খাত নানা ধরনের সংকট ও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। পুরোনো শ্রমবাজার সংকুচিত হচ্ছে, নতুন বাজারে প্রবেশ ব্যাহত হচ্ছে, আর এর ফাঁকে ঢালাও মামলা ও প্রশাসনিক জটিলতায় আস্থার সংকটে পড়েছে পুরো খাত।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, অভিযোগ আর হয়রানিতে আস্থা হারাচ্ছে রিক্রুটিং এজেন্সি: সম্প্রতি সিআইডি ও দুদক বেশ কিছু রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং ও মানব পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এসব মামলা অনেক ক্ষেত্রে প্রমাণ ছাড়াই দায়ের হচ্ছে বলে তারা আতঙ্কে রয়েছেন। সিআইডি একটি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়ে বলেছে—অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ মেলেনি, ফলে সব ব্যবসায়ী খালাস পেয়েছেন।
তবে একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক জানিয়েছেন, এ ধরনের তদন্ত-পরবর্তী মামলা দায়েরের আগেই ব্যবসায়ীরা হয়রানির মুখে পড়ছেন, লাইসেন্স নবায়ন জটিল হচ্ছে। তাদের ভাষায়—যাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ রয়েছে, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কিন্তু এভাবে ঢালাও মামলায় সৎ ব্যবসায়ীরা বিপদে পড়ছেন এবং প্রকৃত অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে আড়ালে।
 অভিযোগ রয়েছে, বিগত সরকার ৭৮ হাজার টাকায় মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ‘লোক দেখানো’ চুক্তি করেছিল, যা বাস্তবায়ন সম্ভব ছিল না। কারণ, একমাত্র টিকিটের খরচই অনেক সময় ৭০ হাজার টাকার কাছাকাছি ছিল।
বর্তমান সরকার বোয়েসেলের মাধ্যমে কর্মী প্রেরণে ফি নির্ধারণ করেছে ১ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা। অথচ এই কর্মীদের আগেই বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে যাওয়ার প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন ছিল।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পুরো প্রক্রিয়ায় সুবিধা পেয়েছে হাতেগোনা কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাদের ঘনিষ্ঠ প্রতিষ্ঠান, কিন্তু মামলা হচ্ছে সাধারণ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। এর ফলে বাংলাদেশ বৈশ্বিক মানব পাচার সূচকে তলানিতে পৌঁছেছে, যা দেশের ভাবমূর্তিকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
এদিকে  মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান ও বাহরাইন—যেসব দেশে বাংলাদেশি শ্রমিকের বড় অংশ কাজ করে, সে বাজারগুলোয় সংকোচনের প্রবণতা পরিসংখ্যানে স্পষ্ট।
২০২২ সালে মালয়েশিয়ায় ৫৯ হাজার ৯০ জন কর্মী গেলেও ২০২৩ সালে সংখ্যাটি ছিল ৩ লাখ ৫১ হাজার ৬৮৩ জন। ২০২৪ সালে তা কমে ৯৩ হাজার ৬৩২-তে দাঁড়ায়। চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত সেখানে গেছেন মাত্র ২ হাজার ৪৮৬ জন।
অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২০২২ সালে ১ লাখ ১ হাজার ৭৭৫ জন, ২০২৩ সালে ৯৮ হাজার ৪২২ জন গিয়েছেন, ২০২৪ সালে ৪৭ হাজার ১৬৬ জন, আর চলতি বছরের মে পর্যন্ত গেছেন মাত্র ২ হাজার ৯৯৩ জন।
ওমানেও একই প্রবণতা দেখা গেছে। ২০২২ সালে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬১২ জন গিয়েছিলেন, যা ২০২৩ সালে কমে ১ লাখ ২৭ হাজার ৮৮৩-তে দাঁড়ায়। ২০২৪ সালে গেছেন মাত্র ৩৫৮ জন এবং চলতি বছরের মে পর্যন্ত মাত্র ৪৩ জন।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বিদেশে শ্রমিক প্রেরণ আগের বছরের তুলনায় কমেছে ২৩ শতাংশ।
 সরকার দীর্ঘদিন ধরে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, রোমানিয়া, ক্রোয়েশিয়া ও পোল্যান্ডে নতুন শ্রমবাজার খোলার উদ্যোগ নিলেও, বাস্তবতা অনেকটাই পিছিয়ে। জাপানের ‘টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রাম (টিআইটিপি)’ বা দক্ষিণ কোরিয়ার ইপিএস প্রোগ্রামের মতো স্কিমে ভাষাগত ও কারিগরি প্রস্তুতির অভাবে বাংলাদেশি কর্মীরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন।
২০২৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় কোটা কমেছে ১৮ শতাংশ। বাংলাদেশের রপ্তানি করা শ্রমিকের মান নিয়ে সংশয় বাড়ায় দেশগুলো তুলনামূলক দক্ষ দেশ ফিলিপাইন, নেপাল ও ভিয়েতনামকে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
এসব বিষয়ে  বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) এক নেতা বলেন, ‘পুরো খাতে এখন হযবরল অবস্থা চলছে। কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির দায়ে পুরো খাত ভুগছে। দীর্ঘদিনের চর্চা থাকা পদ্ধতি হঠাৎ অস্বীকার করে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের পথে বসানো হচ্ছে।’
তার মতে, প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ শ্রমিক বৈধ চুক্তির আওতায় বিদেশে গিয়েছেন, তাদের নিয়েই এখন মানব পাচার ও মানি লন্ডারিংয়ের মামলা হচ্ছে, যা ‘টিআইপি’ সূচকে বাংলাদেশকে রেড জোনে নিয়ে যেতে পারে। এতে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো লাভবান হচ্ছে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, মন্ত্রণালয় অনেক এজেন্সির লাইসেন্স নবায়ন করছে না। লাইসেন্স নবায়নে জটিল শর্ত আরোপ করা হচ্ছে। অনেক সময় মন্ত্রণালয়েরই কর্মকর্তাদের অদক্ষতার খেসারত দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসিম উদ্দিন খান বলেন, ‘সিআইডি কখনো ঢালাও মামলা করে না। অনুসন্ধান ও প্রমাণের ভিত্তিতেই মামলা করা হয়। নিরপরাধ কেউ হয়রানির শিকার হয় না।
সাম্প্রতিক সময়ে সিআইডি ও দুদক মানবপাচার ও মানি লন্ডারিং অভিযোগে একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অনেক মামলা যথাযথ প্রমাণ ছাড়াই করা হচ্ছে, এতে সৎ উদ্যোক্তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তাদের অভিযোগ, প্রশাসনিক জটিলতায় লাইসেন্স নবায়নও কঠিন হয়ে পড়েছে।
মালয়েশিয়া চুক্তি নিয়েও চলছে বিতর্ক। আগের সরকারের ৭৮ হাজার টাকায় শ্রমিক পাঠানোর ঘোষণা ছিল বাস্তবসম্মত নয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এখন বোয়েসেলের মাধ্যমে ১ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকায় কর্মী পাঠানো হচ্ছে। তবে এই প্রক্রিয়ায় বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর ভূমিকা অনেকাংশে কমে গেছে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
নির্বাচনে আগে সহিংসতার শঙ্কা নিয়ে আইআরআই’র সঙ্গে একমত সরকার

নির্বাচনে আগে সহিংসতার শঙ্কা নিয়ে আইআরআই’র সঙ্গে একমত সরকার